Introduction
আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্য দিয়ে জানার চেষ্টা করব আমাদের দেশে জন্ম নেওয়া কিছু মহান মানুষের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন সম্পর্কে, এই আর্টিকেলের মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী সম্পর্কে যে সমস্ত বিষয় গুলি আলোচনা করেছি তা আপনি টেবিল অফ কনটেন্ট এ গিয়ে দেখে নিতে পারেন
নাম (Name):- | ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শর্মা (ishwar Chandra Vidyasagar) |
জন্ম (Birthday):- | ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ (26 September 1820) পশ্চিমবাংলার মেদিনীপুর জেলায় বীরসিংহ গ্রামে |
পিতা:- | ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় |
মাতা:- | ভগবতী দেবী |
জাতীয়তা:- | ভারতীয় |
দাম্পত্যসঙ্গী (Spouse):- | দিনময়ী দেবী (Dinamaye Devi) |
পেশা (Career):- | লেখক, পণ্ডিত,দার্শনিক, প্রকাশক,শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, সংস্কারক, মানবহিতৈষী |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী:- | বর্ণপরিচয় , কথামালা, বোধোদয়, আখ্যানমঞ্জরী ব্যাকরণ কৌমুদী, বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা |
মৃত্যু (Death):- | ২৯ জুলাই ১৮৯১ (29th July 1891) |
কে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর? (Who was Ishwar Chandra Vidyasagar ?) :
ঊনবিংশ শতাব্দীতে অনেক মহান ও জ্ঞানী মানুষের জন্ম হয়েছিল সেই সকল মহান ও জ্ঞানী ,গণ্যমান্য মহাপুরুষদের মধ্যে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। আমাদের দেশের এই মহান মানুষটি ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামে পরিচিত হলেও এনার আসল নাম ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় । তবে ঈশ্বর চন্দ্র শর্মা নামেও তিনি কখনও কখনও স্বাক্ষর করতেন । তিনি ছিলেন একজন বিনয়ী এবং বিরল গুণের অধিকারী ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন শিক্ষক এর পাশাপাশি ছিলেন দার্শনিক, লেখক, শিক্ষাবিদ ,অনুবাদক, প্রকাশক ,সমাজ সংস্কারক এবং মানবহিতৈষী । তিনিই হলেন প্রথম বাংলা লিপি সংস্কারক । ছোটবেলায় আমরা যার কারণে আমাদের এই বাংলা ভাষা সহজেই লিপিবদ্ধ করতে শিখেছিলাম সেই মহান মানুষটি আর কেউ না আমাদের সবার শিক্ষক মাননীয় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ।
কারণ বর্ণপরিচয় নামক যে বইটি দেখে থেকে আমরা এই বাংলা ভাষা লিপিবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম সেই বর্ণপরিচয় বইটির প্রকাশক স্বয়ং ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় । তিনিই হলেন বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার । সংস্কৃত ভাষায় ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য 1839 সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন ।
Bankim Chandra Chattopadhyay: Inspiring Patriotism through Timeless Writings
Read Biography
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভারতীয় সমাজে পুরুষদের সাথে মহিলাদের সমান মর্যাদার জন্য লড়াই করেছিলেন । মহিলাদের জন্য বিধবা পুনর্বিবাহ প্রথা তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন । তিনি সমাজের পুঞ্জিভূত অন্ধকারে অসহায়তা ,দুঃখ ,কান্না মুছে দিয়ে, করুনার স্পর্শে হাসি ফুটিয়ে ছিলেন ।তিনি আর কেউ নন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহাপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম এবং পরিবার (Birth and family of Ishwar Chandra Vidyasagar):
26 সেপ্টেম্বর 1820 সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে একটি বাঙালী হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় । এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর নামক জেলাটি পূর্বে অবিভক্ত “মেদিনীপুর জেলা “নামে পরিচিত ছিল, পরিবারটি মূলত বর্তমানে বনমালিপুর জেলার বাসিন্দা। তার পিতা ছিলেন ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যিনি এই মহাপুরুষকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন সেই সৌভাগ্যবতী নারী ছিলেন ভগবতী দেবী ।
You May Like:- Think and Grow Rich Summary by Napoleon Hill
ঈশ্বরচন্দ্রের মা ভগবতী দেবী ছিলেন একজন অসামান্য মহিলা যিনি সেই সময়কার সামাজিক কুসংস্কার আচ্ছন্ন পরিবেশে থেকেও আধুনিক চিন্তার অধিকারিণী হয়ে উঠেছিলেন পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না হওয়াই অতি অল্প বয়সেই ঈশ্বরচন্দ্রের বাবা ঠাকুরদাস বন্দোপাধ্যায় অর্থ উপার্জনের জন্য কলকাতায় যান এবং সেখানে গিয়ে কলকাতার ‘বড়বাজারে’ ভগবত চরণ নামক একটি ব্যবসায়িক এর বাড়িতে খুবই অল্প পয়সার বিনিময়ে খাতা লেখার কাজ করতেন । পরে তিনি ধীরে ধীরে তার কাজের প্রতি ন্যায়-নিষ্ঠা এবং সততার সাথে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছিলেন । বাবার এইসকল অসামান্য গুণগুলি পরে ঈশ্বরচন্দ্রের মধ্যেও পূর্ণ মাত্রায় প্রকাশ পেয়েছিল ।
9 বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাবার কাছে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন । ঈশ্বরচন্দ্র ভগবত চরণের বিশাল পরিবারের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাচ্ছন্দ্যে বসতি স্থাপন করেন। ঈশ্বরের প্রতি ভগবতের কনিষ্ঠ কন্যা রাইমনির মাতৃসুলভ এবং স্নেহপূর্ণ অনুভূতি তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল, এবং ভারতে নারীর মর্যাদা উন্নীত করার জন্য তার পরবর্তী বিপ্লবী কাজের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল।
Most Popular Biography
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা (Education of Ishwar Chandra Vidyasagar) :
ঈশ্বরচন্দ্র ছাত্র থাকা অবস্থাতে কোনদিনই তার পড়াশোনায় অমনোযোগী হননি তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র আর তিনি কতটা মেধাবী ছিলেন তার প্রমাণ আমরা পরবর্তীকালে পেয়েছি, প্রচলিত আছে যে বাবার সাথে কলকাতায় যাবার পথে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার অসামান্য মেধা বলে ইংরেজি সংখ্যা 1 থেকে 10 পর্যন্ত শিখেনিয়েছিলেন ,রাস্তার ধারে দেওয়া মাইলফলক দেখে দেখে ।
জ্ঞানের জন্য তার অন্বেষণ এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি রাস্তার আলোর নীচে পড়াশোনা করতেন, কারণ বাড়িতে গ্যাসের বাতি জ্বালানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। 1839 সালে আইন পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। বিদ্যাসাগর সাগর উপাধিটি তার জন্য উপযুক্ত।বিদ্যার সাগর, জ্ঞানের সাগর,করুণার সাগর, মনুষ্যত্বের সাগর, প্রগতির সাগর, চেতনার সাগর এই সব বিশেষণ ইনার জন্য উপযুক্ত ও প্রযোজ্য। যদি বলতে হয়, ব্যক্তিত্বের সাগর, এটাকে যদি আমরা যুক্ত করি তাহলে অনুচিত হবে না।
কলকাতার সংস্কৃত কলেজে দীর্ঘ 12 বছর পড়াশোনা করার পর 1841 সালে সংস্কৃত ,ব্যাকরণ, অলংকার শাস্ত্র বেদান্ত সাহিত্য, স্মৃতি এবং জ্যোতির্বিদ্যায় যোগ্যতা অর্জন করে এবং কলেজ থেকে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন । শিক্ষক জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের একজন বিশিষ্ট ছাত্র হয়ে উঠেছিলেন বিদ্যাসাগর ,তার কাছেই তিনি সংস্কৃত পড়তেন এবং কলেজের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন ।
Biography Of Sardar Vallabhbhai Patel: The Powerful Journey of Leadership and Unity
Popular Biography
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন (Career of Ishwar Chandra Vidyasagar)
1846 সালে মাত্র 21 বছর বয়সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃত বিভাগে পন্ডিত হিসেবে যোগদান করেন । তিনি তেজস্বী মন নিয়ে অচিরেই ইংরেজি ও সংস্কৃতি তে পারদর্শী হয়ে ওঠেন । বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তি ছিল অপরিসীম জানা যায় যে ছোট ভাইয়ের বিয়ের সময় মা ভগবতী দেবী ঈশ্বরচন্দ্রকে একটি পত্র লেখেন বাড়িতে আসার জন্য ।
মায়ের আদেশ পেয়ে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যক্ষ মার্শাল সাহেবের কাছে ছুটি চান বাড়ি যাবার জন্য , কিন্তু মার্শাল সাহেব ছুটি দিতে অস্বীকার করেন ,তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন এবং তাকে বলেন যে তিনি মায়ের আদেশ অমান্য করতে পারবেন না । অবশেষে মার্শাল সাহেব তাকে ছুটি দিতে রাজি হন ,ছুটি পাবার পর তিনি সেই রাতেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেন ।
আবহাওয়া খারাপ হওয়ার জন্য নদী পারাপারের কোন নৌকা তখন চলছিল না তাই তিনি আর কোন উপায় না দেখে দামোদর নদীতে ঝাঁপ দেন এবং প্রকাণ্ড দামোদর নদী পার করে বাড়িতে এসে পৌঁছান । ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পাঁচ বছর কাজ করবার পর 1846 সালে তিনি প্রধান পন্ডিত এর কাজ ছেড়ে দিয়ে “সহকারি সচিব” হিসাবে সংস্কৃত কলেজে যোগদান করেন ।
You May Like:- Biography of Sukumar Ray: A Wonderful Journey into Literary Genius
চাকরির প্রথম বছরই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনার জন্য একটি আবেদনপত্র পেশ করেন কিন্তু এই আবেদন পত্র দেখার পর কলেজের সেক্রেটারি রসময় দত্তের সাথে বিদ্যাসাগরের মনোমালিন্য হয় এবং তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয় । বিদ্যাসাগর কোনদিন কারো ক্ষমতার কাছে মাথানত করতে শেখে নি,এর ফলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এক বছর পরে সংস্কৃত কলেজের সহকারী সচিবের পদ ছেড়ে দেন ।
সংস্কৃত কলেজের চাকরি প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি আবার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে প্রধান কেরানির কাজে নিযুক্ত হন ,কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তিনি আবার অধ্যাপক হিসেবে সংস্কৃত কলেজে ফিরে আসেন বিদ্যাসাগর কোনদিন কারো ক্ষমতার কাছে মাথানত করতে শেখেনি
1851 সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের প্রধান অধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত হন 1855 সালে তিনি স্কুলের একটি বিশেষ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং শিক্ষার মান তদারকির জন্য বাংলার গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করতে থাকেন ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখনই ফুটপাতে রাস্তায় দুর্বল মানুষদেরকে পড়ে থাকতে দেখতেন তখনই কষ্টে তার মন কেঁদে উঠত, তাই তিনি তাঁর বৃত্তি ও বেতন এর একটি অংশ ওইসব দরিদ্র মানুষদের কল্যাণের জন্য ব্যয় করতেন ।
Know About the most successful investor Warren Buffett: Biography Of Warren Buffett
Popular Business Man
শিক্ষাব্যবস্থায় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কৃতিত্ব (Ishwar Chandra Vidyasagar’s achievement in education:
বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে প্রচলিত মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পুনর্নির্মিত করেছিলেন , এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক অন্তর্দৃষ্টি আনার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অপরিসীম । সংস্কৃত কলেজে ফিরে এসে বিদ্যাসাগর প্রথম যে পরিবর্তন করেছিলেন তা হল সংস্কৃত ছাড়াও ইংরেজি ও বাংলা ভাষাকে শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ।
তিনি বৈদিক শাস্ত্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইতিহাস বিজ্ঞান ও দর্শনের বিষয়গুলি শুরু করেন। সংস্কৃত কলেজের ভর্তির নিয়ম কানুন গুলিও তিনি পরিবর্তন করেছিলেন যাতে অন্যান্য শ্রেণীর ছাত্ররা এখানে মর্যাদাপূর্ণ ভাবে পড়াশোনা করার অনুমতি পান । তিনি সর্বপ্রথম কলকাতায় ভর্তি ফি এবং টিউশন ফি এর ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন ।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিনি নর্মাল স্কুল স্থাপন করেন যাতে শিক্ষার পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মধ্যে ভিন্নতা তৈরি না হয় । তিনি হিন্দু ফিমেল স্কুলের সেক্রেটারিও ছিলেন যা পরে বেথুন ফিমেল স্কুল নামে পরিচিত হয়.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার (social reform Of Ishwar Chandra Vidyasagar) :
তখনকার দিনে মহিলাদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর কুপ্রথা ছিল কম বয়সী মেয়েদের কে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হতো বয়স্ক পুরুষদের সাথে একবার তাদের স্বামী মারা গেলে বাকি জীবনটা তাদেরকে সাদা কাপড় পরে কাটাতে হতো
সমস্ত সামাজিক আনন্দ তাদের ত্যাগ করতে হতো একটি কলঙ্কিত এবং সবার থেকে আলাদা জীবন-যাপন করতে হতো এবং তারা আর কখনো বিবাহ করতে পারতেন না, যাতে তারা কোন পুরুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে না পারে তার জন্য তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হতো
তৎকালীন সমাজে নারীদের ওপর যে অত্যাচার চালানো হতো বিদ্যাসাগর সেই বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন তার মা যিনি একজন মহান চরিত্রের মহিলা ছিলেন তিনি তাঁকে হিন্দু বিধবাদের বেদনা ও অসহায়ত্ব দূর করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন । যারা ত্যাগের জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিল যারা সমাজের মৌলিক আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিল এবং প্রায়ই অন্যায় ভাবে নির্যাতিত হতো এবং তাদের পরিবারের দ্বারা বোঝা হিসেবে পরিচিতি পেত ,
বিদ্যাসাগর সেই সকল অসহায় মহিলাদের জন্য এবং জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করার জন্য নিজের লক্ষ্য স্থির করেছিলেন ।
You May Like:- Maximizing the Potential of Blockchain: Your Definitive Guide to Transformation
তিনি অর্থোডক্স সমাজের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হন যে ধারণাটি কে ধর্মবিরোধী বলে অভিহিত করা হয়েছে তা শাস্ত্র অনুযায়ী সঠিক না বলে প্রমাণ করেন এবং প্রমাণ করেন যে বিধবা পুনর্বিবাহ বৈদিক শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত ।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি তার যুক্তি তুলে ধরেন এবং হিন্দু বিধবা মহিলাদের জন্য বিধবা পুনর্বিবাহ আইন 1856 সালে 26 শে জুলাই পাস করাতে সক্ষম হয়েছিলেন । সমাজকে বিধবা পুনর্বিবাহ আইন সম্পর্কে সচেতন করতে 1870 সালে তিনি তার ছেলে নারায়ণ চন্দ্র কে একজন কিশোরী বিধবার সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন ।
নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কৃতিত্ব অপরিসীম তিনি নারীদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কতকগুলি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন, বাড়ির চত্বরে একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন, যাকে তিনি নন্দন কানন নামে অভিহিত করেছিলেন।
Biography Of Bhagat Singh: The Inspiring Story of Indian independence movement
Freedom Fighter Of India
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অর্জিত সম্মান (Acquired respect Of Ishwar Chandra Vidyasagar) :
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অপরিসীম জ্ঞানের জন্য তাকে বিদ্যাসাগর উপাধি দেওয়া হয়। নিঃস্বার্থ ,পরার্থপরতার জন্য মাইকেল মধুসূদন তাঁকে ‘দয়া সাগর’ (উদারতার সাগর) উপাধি দিয়েছিলেন।
- কলকাতায় একটি সেতুর নাম বিদ্যাসাগর সেতু রাখা হয়।
- ইন্ডিয়ান পোস্ট অফিস 1970 সালে এবং 1998 সালে বিদ্যাসাগরের ছবি সম্বলিত একটি স্টাম্প জারি করেন ।
- ঝাড়খণ্ড সরকার 26 সেপ্টেম্বর 2019-এ মহান সমাজ সংস্কারকের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার চিহ্ন হিসাবে জামতারা জেলার করমাতান্ড ব্লককে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ব্লক হিসাবে নামকরণ করেছে।
- 2004 সালে বিদ্যাসাগর BBC সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় 9 নম্বর স্থান দখল করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচিত বইগুলি (Books written By Ishwar Chandra Vidyasagar) :
তিনি সামাজিক সমস্যা এবং অর্থোডক্স বিশ্বাসের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর অনেক বই লিখেছেন।
তার শিক্ষা মূলক গ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে
- বর্ণপরিচয়
- ব্যাকরণ
- কৌমুদী ঋজু পাঠ
- সংস্কৃত ব্যাকরণ
- উপক্রমণিকা
এবং তিনি কিছু বই বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত করেছিলেন তার এই অনুবাদ গ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে
- বেতাল পঞ্চবিংশতি
- সীতার বনবাস
- শকুন্তলা
- মহাভারতের উপক্রমণিকা ইত্যাদি
Indian social reformer
এছাড়াও তিনি তিনি কিছু ইংরেজি বই বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত করেছিলেন যে গুলির মধ্যে রয়েছে
- জীবন চরিত
- বাংলার ইতিহাস
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিছু মৌলিক গ্রন্থ লিখে গেছেন তার মৌলিক গ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে
- সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃতি সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব
- বহুবিবাহ বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এ বিষয়ে প্রস্তাব
- বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এ বিষয়ে প্রস্তাব
- প্রভাবতী সম্ভাষণ জীবনচরিত
- নিষ্কৃতি লাভের প্রয়াস
- ভূগোল খগোল বর্ননম
- ব্রজবিলাস
- রত্নপরীক্ষা
- অতি অল্প হইল এবং
- আবার অতি অল্প হইল
তার রচিত ইংরেজি গ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে
- সিলেকশন ফ্রম গোল্ড স্মিথ
- পেট্রিকেল সিলেকশন
- সিলেকশন ফ্রম ইংলিশ লিটারেচার
নারায়ণচন্দ্র যিনি কিনা ঈশ্বরচন্দ্রের ছেলে ছিলেন, তিনি তাঁর বাবার মৃত্যুর পর 1891 সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর বাবার অসমাপ্ত আত্মজীবনী “বিদ্যাসাগর চরিত” প্রকাশ করেন
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যু ( Deth of ishwar chaandra vidyasagar):
ডাক্তারের মতে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন অনেকদিন ধরেই | আমাদের দেশের এই মহান পন্ডিত শিক্ষাবিদ ও সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 1891 সালের 29 জুলাই 70 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, যদিও আজকে এই জনপ্রিয় লেখক, শিক্ষাবিদ, পন্ডিত, দার্শনিক, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আমাদের মধ্যে শারীরিকভাবে উপস্থিত নেই তবুও তার প্রচলিত সংস্কার আদর্শ আধুনিক সমাজে ভাবনা চিন্তার মধ্যে সর্বদাই বাঙালির মধ্যে বিরাজ করছেন
You May Like:- Mahatma Gandhi: An Extraordinary Life – Read His Biography